ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই ঝিনাইদহ শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া নবগঙ্গা নদীর পাড়ে মেলে প্রাণের ছোঁয়া।
নদীর ধারে পাখির কিচিরমিচির আর নির্মল বাতাসে মনোরম পরিবেশ। এর মধ্যেই দেখা যায়, শতাধিক মানুষ কেউ হাত নাড়িয়ে, কেউ একে অন্যের দিকে তাকিয়ে হা হা করে হাসছেন। প্রথম দেখায় ভাবতে পারেন, হয়তো হাসিঠাট্টা চলছে। কিন্তু না, এটি শরীরচর্চার একটি অংশ। যা মানুষের হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখে, মানবদেহে আসে প্রশান্তি, কমে ক্লান্তি।
প্রতিদিন সকালে এই হাসির মধ্য দিয়েই সমাপ্তি হয় নবগঙ্গা ফিটনেস ক্লাবের এক ঘন্টার শরীরচর্চা। অনেকেই বলেন, সকালে নবগঙ্গার পাড়ে শরীরচর্চা না হলে দিনটা অসম্পূর্ণ মনে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবগঙ্গা ফিটনেস ক্লাবের প্রশিক্ষক কাজী আলী আহম্মেদ লিকু (৫৫)। তিনি একজন কারাতে প্রশিক্ষকও। লিকু এ পর্যন্ত দুই হাজারের অধিক তরুণ-তরণীকে কারাতে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
ঝিনাইদহ শহরের বেপারিপাড়ার ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী কাজী আলী আকবর সন্তান। লিকু তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে বড়ো। ১৯৮৬ সাল থেকে তিনি কারাতের প্রশিক্ষক।
কাজী আলী আহম্মেদ লিকু ১০ম শ্রেণিতে পড়ার সময় ঝিনাইদহ থেকে সপ্তাহে দুই দিন যশোরে গিয়ে কারাতে শেখেন। পরে ঢাকা থেকে সেন্সি হুমায়ুন কবির জুয়েলের কাছ থেকে ১৯৯২ সালে শিক্ষা নেন। পরে বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশন থেকে ১০৩ সিরিয়ালে ব্লাক বেল্ট পান। পরে ঝিনাইদহে ফিরে স্কুল কলেজের প্রায় দুই হাজারের অধিক শিক্ষার্থীকে কারাতে প্রশিক্ষণ দেন। পরে বাংলাদেশ ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান থেকে জিমন্যাস্টিকের উপরে প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেন। সোতোকান কারাতে দো ঝিনাইদহ- নামে একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন।
বর্তমানে শহুরে জীবনে মানুষের স্বাস্থ্য ঠিক রাখায় যে দায়, এমন পরিস্থিতিতে এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেন কাজী আলী আহম্মেদ লিকু। চলতি বছরের জুলাই মাসের শুরুতে গঠন করেন নবগঙ্গা ফিটনেস অ্যাকাডেমি। জেলা শহরের রেজিস্ট্রি অফিস সংলগ্ন নবগঙ্গা নদীর তীরে দেবদারু চত্বরে এই ক্লাবের কার্যক্রম।
প্রতিদিন ভোরের আলো ফুটতেই একে একে নদী তীরের সবুজে ঘেরা মনোরম পরিবেশে হাজির হন ছাত্র, শিক্ষক ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এরপর তারা শুরু করেন হাসি, ইয়োগা, ফ্রি হ্যান্ডসহ নানা ধরনের শরীরচর্চা। সকাল ৬টা থেকে শরীরচর্চা শুরু হয় চলে ৭টা পর্যন্ত।
শরীরচর্চায় অংশগ্রহণকারী আবু হাসান বলেন, ‘প্রতিদিন ভোরে এখানে আসি শরীরচর্চা করতে। এতে ভালো ফলাফল পেয়েছি। আমি নিজেই ফ্যাটিলিভারে আক্রান্ত ছিলাম। একমাস ব্যায়ামের পর পরীক্ষা করে দেখি ফ্যাটিলিভার অনেক কমে গেছে। ওষুধমুক্ত সুস্থ জীবন গড়তেই এখানে আসা আমাদের।’
সাংবাদিক শাহানুর আলম বলেন, ‘এখানে যারা শরীরচর্চা করি, তাদের অধিকাংশের বয়স ৪৫ থেকে ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। নিয়মিত শরীরচর্চার কারণে রক্ত সঞ্চালনে অনেক রোগ ভালো হয়। এতে করে অতিরিক্ত ফ্যাটও কমে।’
আব্দুল মতিন নামে একজন বলেন, ‘দলবদ্ধভাবে কিছু করার মধ্যে একটা আনন্দ আছে। শরীরচর্চা এককভাবে করলে সেই আনন্দ পেতাম না। নবগঙ্গার ধারে যে মুক্ত বাতাস মেলে। এতে মন-মানসিকতা অনেক ভালো হয়।
প্রশিক্ষক লিকু বলেন, ‘শুরুতে চার সদস্য নিয়ে কার্যক্রম শুরু করি। এখন সেই সংখ্যা একশ’ ছাড়িয়েছে। প্রতিনিয়তই সদস্য বাড়ছে।’
তিনি জানান, স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি আরটিকেলের মাধ্যমে জানা যায়, বাংলাদেশে ফ্যাটিলিভারে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। সাথে উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলও। উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ছে। এ থেকে কীভাবে মানুষকে রক্ষা করা যায়- সেই চিন্তা থেকে শরীরচর্চার এই উদ্যোগ।
হাসি ব্যায়ামেরই একটা অংশ, কারণ মানুষের সারাদিনের ক্লান্তি দূর করার টনিক হচ্ছে হাসি। এতে কর্মের স্পৃহা বাড়িয়ে তোলে- জানান তিনি।