যশোর, বাংলাদেশ || বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫
Subornovumi Subornovumi Subornovumi Subornovumi Subornovumi Subornovumi
Ad for sale 870 x 80 Position (1)
Position (1)
Ad for sale 870 x 100 Position (1)
Position (1)

মাধ্যমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার

সুবর্ণভূমি ডেস্ক

প্রকাশ : মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর,২০২৫, ১১:১৬ পিএম
মাধ্যমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার

সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা মাউশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দাবি নিয়ে বৈঠকের পর কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। মঙ্গলবার রাতে তারা এ ঘোষণা দেন। তবে আন্দোলনে অনঢ় থেকে নতুন করে স্কুলে ‘তালা ঝুলানোর’হুমকি দিয়েছেন সরকারি প্রাথমিকের শিক্ষকরা।

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি ছয় নেতার যৌথ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কর্মবিরতি সাময়িক স্থগিত ও বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম যাতে কোনোভাবে ব্যাহত না হয়, এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাসমাশিস ঘোষিত কর্মবিরতি সাময়িক স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বার্ষিক পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষার অনিশ্চয়তায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা যে মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন, তা অনুধাবন করে দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

এতে আরো বলা হয়, তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষা ও তাদের শিক্ষাজীবনকে স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনা শিক্ষকদের অন্যতম দায়িত্ব। তাই বুধবার থেকে বার্ষিক পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তারা।

একই সাথে, শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া সমাধানের পথে এগিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ কামনা করেন ভবিষ্যতে শিক্ষা কার্যক্রম যাতে আর বাধাগ্রস্ত না হয়। যারা স্বতস্ফূর্তভাবে কর্মসূচি পালন করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন নেতারা।

মঙ্গলবার রাত ১০ টার দিকে বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি ও কেন্দ্রীয় সমন্বয় পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক রেবেকা সুলতানা বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে; তাদের আশ্বাসের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নিয়েছি। ফলে বুধবার স্কুলে শিক্ষকরা কাজে যোগ দিবেন ও পরীক্ষাও যথারীতি চলবে।’

মঙ্গলবার রাতের বৈঠকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তবে বৈঠকটির আলোচ্য বিষয় ও সিদ্ধান্ত নিয়ে গোপনীয় রক্ষা করছেন দুই পক্ষই। পরে বিস্তারিত জানানোর কথা বলছেন শিক্ষকরা।

ওই বৈঠকে শিক্ষকদের পক্ষে প্রধান সমন্বয়ক রেবেকা সুলতানা ছাড়াও আবু সাঈদ মোল্লা ও শাহাব উদ্দিন মাহমুদ সালফীসহ শিক্ষক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে চার দফা দাবিতে সোমবার থেকে দেশের শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিনেও মঙ্গলবার ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে গিয়ে ফিরে যায়। তবে বিচ্ছিন্নভাবে কোনো কোনো সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনো বিদ্যালয়ে কর্মচারীদের পাহারায় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রাথমিক শিক্ষকদের হুমকি
অন্যদিকে তিন দফা দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের একাংশের কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবারও অধিকাংশ স্কুলে পরীক্ষা হয়নি। সোমবার থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যেই শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক খায়রুন নাহার লিপি আমার দেশকে বলেন, সোমবারের চেয়েও মঙ্গলবার জোরালোভাবে কর্মবিরতি পালিত হয়েছে। প্রথমদিন যারা অংশ নেয়নি তারাও গতকাল কর্মবিরতি পালন করেছেন। দাবি আদায় না হওয়া নাগাদ আন্দোলন চালিয়ে যাব।

এদিকে একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চ গ্রেডের জটিলতা নিরসন ও সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলন করা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বারোটি সংগঠনের মোর্চা বুধবার পর্যন্ত সময় দিয়েছে। গতকাল প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আনিসুর রহমান বলেন, ‘সোমবার রাতে ভার্চুয়ালি সভা করে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি বাস্তবায়নের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে বৃহস্পতিবার থেকে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘তালাবদ্ধ’কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। সহকারী শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন যোগাযোগ চললেও প্রত্যাশিত অগ্রগতি না হওয়ায় তারা বাধ্য হয়েই কঠোর কর্মসূচি দিচ্ছেন।

গত সপ্তাহের রোববার ও সোমবার অর্ধদিবস এবং মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন এই মোর্চাভুক্ত শিক্ষকরা।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সারা দেশে বর্তমানে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে তিন লাখ ৮৪ হাজারের বেশি শিক্ষক কর্মরত। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই সহকারী শিক্ষক। প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বর্তমানে দশম গ্রেডে উন্নীত হয়েছেন। সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন।

সহকারী শিক্ষকদের দাবি হলো, দশম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, দশ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড সমস্যার সমাধান ও শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি। তবে সরকার দশম গ্রেড দিতে সরাসরি অস্বীকৃতি জানিয়ে আপাতত ১১তম গ্রেডের সুপারিশ করেছে। শিক্ষকরাও আপাতত সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দাবি করেন।

চার শিক্ষক নেতাকে শোকজ
এদিকে পরীক্ষায় বাধা দেওয়ার অভিযোগে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের চার নেতাকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিস দিয়েছে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। মঙ্গলবার বিকেলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নুরুল হাসান তাদের এই নোটিস দেন। নোটিসে তিন কর্মদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শোকজ নোটিস পাওয়া শিক্ষক নেতারা হলেন, প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি, বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও নোয়াখালী সদরের কৃপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শামছুদ্দীন মাসুদ, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবুল কাশেম এবং প্রাথমিক শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদের সমন্বয়ক ও জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহবুবার রহমান।

শিক্ষা উপদেষ্টার হুঁশিয়ারি
এদিকে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার বলেছেন, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দেশের বিভিন্ন স্থানে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বন্ধের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সরকারি কর্মচারী বিধি লঙ্ঘনের দায়ে তাদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আন্দোলনের নামে যা করছেন, তা সরকারি আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল। সরকারি আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য আপনাদের কিন্তু তৈরি থাকতে হবে। এখানে সরকার একেবারে দৃঢ়ভাবে তার অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে।

ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

Ad for sale 270 x 200 Position (2)
Position (2)