সরোয়ার হোসেন
, যশোর
যশোর-১ (শার্শা) আসনে বিএনপির প্রার্থী মফিকুল হাসান তৃপ্তির মনোনয়ন পুনর্বিবেচনায় যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক অবরোধ করার ঘটনায় দলের ভেতরে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনায় জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে সোমবার (১ ডিসেম্বর) শার্শা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটনকে কারণ দর্শানো নোটিস দিয়েছে।
যশোর-১ আসনে মফিকুল হাসান তৃপ্তিকে ধানের শীষের প্রার্থী করায় শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহির ও নুরুজ্জামানপক্ষীয়রা প্রথম থেকেই আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছিলেন। ইতোপূর্বে সেই আন্দোলন মিছিল-মিটিংয়ে সীমাবদ্ধ থাকলেও সম্প্রতি তা গড়ায় রাস্তা অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিতে।
গত ২৯ নভেম্বর বিকেল ৩টার দিকে কয়েক কয়েকশ’ নেতা-কর্মী কাফনের কাপড় পরে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে অবস্থান নিলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে পথচারী ও যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছায়।
অসন্তুষ্ট নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, মাঠের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে হঠাৎ করে একজন সংস্কারপন্থী নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ায় কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, প্রার্থী পরিবর্তন না হলে আন্দোলন আরও কঠোর করা হবে।
কর্মসূচিতে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াসিউদ্দীন বলেন, ‘বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, প্রয়োজনে প্রার্থী পরিবর্তন করা হবে। আমরা সেই আশাতেই মাঠে নেমেছি। বর্তমান প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল না করা হলে বিএনপি এই আসনে বড় ভুল করবে।’
আরেক নেতা মহিবুল বলেন, ‘দীর্ঘ ১৭ বছর দলের কঠিন সময়ে সভাপতি আবুল হাসান জহির ও সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটন আমাদের জন্য মাঠে ছিলেন। তাদের দুইজনের একজন ছাড়া এ আসনে বিজয় সম্ভব নয়।’
যুবদলনেতা মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা বাড়িছাড়া হয়েছি, কিন্তু দলের দুঃসময়ে যারা ছিলেন না, তাদের হঠাৎ মনোনয়ন দেওয়া আমরা কখনো মেনে নেবো না। অতিথি পাখিকে এ আসনে মানি না।’
এদিকে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদীন দল- বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া যখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, তখন শার্শা উপজেলা বিএনপি সভাপতি ও সম্পাদক তাদের পক্ষীয়দের নিয়ে আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী পরিবর্তনে যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করায় দলের সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।
স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দেশের সব শ্রেণির মানুষ যখন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তির জন্য দোয়া মাহফিল করছেন, তখন একটি উপজেলার নেতারা কীভাবে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সড়ক অবরোধ করে মিছিল-মিটিং করতে পারে। তারা দেশ ও দলের স্বার্থে নয়, রাজনীতি করছেন ব্যক্তিস্বার্থে। দলীয় প্রধানের প্রতি তাদের কোনো মায়া-মমতা থাকলে এমন কর্মকাণ্ড করতে পারতেন না।
এ ব্যাপারে বেনাপোল পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ বলেন, ‘শার্শা উপজেলা কমিটির নেতাদের কর্মকাণ্ডে বিএনপির পরিবার হিসেবে আমরা লজ্জিত। আমার মাথায় আসে না দেশের এ ক্রান্তিকালে দলমতনির্বিশেষে সবাই যখন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবরে যখন হতবিহ্বল, তখন নেতারা ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে তাদের অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহির বলেন, ‘ওই কর্মসূচিতে আমি বা সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটন কেউই ছিলেন না। প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা পূর্বে ঘোষিত কর্মসূচি পালন করেছে। তারা দলকে ভালোবাসে, এই আসনে প্রার্থী তাদের মতে ঠিক হয়নি বিধায় মিছিল সমাবেশ করছে। কিন্তু যেই মূহূর্তে তারা জানতে পারে, দেশনেত্রীর শারীরিক অবস্থার কথা, তারা সেখানেই কর্মসূচি শেষ করে দেয়।’
এদিকে, শার্শায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিব্রত দলের জেলা কমিটিও।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) যশোর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন স্বাক্ষরিত একটি কারণ দর্শানো নোটিস পাঠানো হয়েছে শার্শা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটন বরাবর। নোটিসে বলা হয়েছে, ‘আপনাকে মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল প্রাথমিকভাবে মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, মোটরসাইকেল মহড়া ইত্যাদি না করার জন্য। তদুপরি গত ২৯ নভেম্বর শার্শায় আপনার অনুসারীরা মহাসড়ক অবরোধ করে প্রার্থীর বিরুদ্ধে সভা, সমাবেশ ও কাফনের কাপড় পরে সড়কে শুয়ে পড়া ইত্যাদি কার্যক্রম করেছে। দুঃখজনক বিষয় হলো, যখন দেশনেত্রীর গুরুতর অসুস্থতার কারণে সকল কর্মসূচি বন্ধ করা হয়েছে, সেইসময় বিবেকবিবর্জিত এইসব কর্মসূচি সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। পত্র-পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড়ে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। দায়িত্বশীল পদে থেকে আপনি এর দায়ভার থেকে মুক্ত নন।’
পত্রপ্রাপ্তির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সশীরের উপস্থিত হয়ে লিখিতভাবে কারণ দর্শাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ওই নোটিসে। ব্যর্থ হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে শার্শা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটন জানিয়েছেন, সেইদিনের কর্মসূচিতে তিনি ছিলেন না। তারপরও যেহেতু কারণ দর্শানোর নোটিস পেয়েছেন, তিনি এর জবাব দেবেন।
প্রসঙ্গত, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতিতে যশোর বিএনপির পক্ষে অনুষ্ঠেয় নানা কর্মকাণ্ড সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। এমনকী যশোর-৩ (সদর) আসনেও নির্বাচনী কর্মকাণ্ড আপাতত স্থগিতের ঘোষণা দেন এই আসনের প্রার্থী, দলের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।