যশোর, বাংলাদেশ || বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫
Subornovumi Subornovumi Subornovumi Subornovumi Subornovumi Subornovumi
Ad for sale 870 x 80 Position (1)
Position (1)
Ad for sale 870 x 100 Position (1)
Position (1)

যশোর সদর আসনে অমিতের প্রতিদ্বন্দ্বী বদলের গুঞ্জন

জহর দফাদার

, যশোর

প্রকাশ : মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর,২০২৫, ১০:০০ এ এম
যশোর সদর আসনে অমিতের প্রতিদ্বন্দ্বী বদলের গুঞ্জন

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৩ (সদর) আসনে বিএনপির অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের প্রধান প্রতিপক্ষ জামায়াতের ভিপি আব্দুল কাদেরের লড়াইটা শেষমেষ হবে কি না- এমন প্রশ্ন স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে। জোর গুঞ্জন রয়েছে, জামায়াতের প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে। সেইক্ষেত্রে এই আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের (চরমোনাই পীর) প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা শোয়াইব হোসেন হচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থী।

যদিও সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র কেউই বিষয়টি নিশ্চিত করেননি। তবে, অনেকেই বলছেন, ‘শুনেছি এমন কথা’। কারণ হিসেবে বলছেন, যেহেতু জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলামী ও বাংলাদেশ উন্নয়ন পার্টির সমন্বয়ে আটটি রাজনৈতিক দলের ইস্যুভিত্তিক ঐক্য হয়েছে, সেকারণে সমঝোতার ভিত্তিতে সারাদেশেই আসন পুনর্বিন্যাস হতে পারে। সেইক্ষেত্রে যশোরের বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার পরপরই অন্যান্য স্থানের মতো যশোর-৩ (সদর) আসনেও সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠপ্রস্তুতের কাজ শুরু করেন। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপি, খেলাফত মজলিসসহ নির্বাচনমুখী দলগুলোকে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে।

বিএনপি গত ৩ নভেম্বর দেশের বিভিন্ন আসনে তাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে। যশোর-৩ আসনে প্রার্থী করা হয় এই আসনের সাবেক এমপি, সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী প্রয়াত তরিকুল ইসলামের সন্তান অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে। তিনি বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত)। ঘোষণা আনুষ্ঠানিকতামাত্র, এরআগে থেকেই তিনি তৃণমূল পর্যায়ে নানামুখী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তার অস্তিত্ব জানান দিয়ে আসছেন।

জামায়াত এই আসনে প্রার্থী করেন যশোর সরকারি এমএম কলেজের সাবেক ভিপি আব্দুল কাদেরকে। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী, ব্যবসার ক্ষেত্র ঢাকায়। তিনিও এই আসনের প্রার্থী হিসেবে নিজের অবস্থানকে জানান দিতে জনসংযোগ, প্রচারণা সবকিছুই করে আসছেন। তেমনি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা শোয়াইব হোসেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা রমিজ উদ্দিন, খেলাফত মজলিসের হাফেজ মাওলানা আব্দুল্লাহ, এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য খালিদ সাইফুল্লাহসহ কয়েকজন প্রচারে কাজ করে চলেছেন।

আট দলের অন্যতম শরিক দল জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি- জাগপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও খুলনা বিভাগীয় প্রধান সমন্বয়ক নিজামউদ্দিন অমিত বলেন, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সমঝোতার ভিত্তিতেই হবে। বিএনপি যেমন সমমনাদের সঙ্গে সমঝোতা করছে, তেমনি আট দলও সমঝোতার ভিত্তিতে প্রার্থী দেবে। সেইক্ষেত্রে প্রত্যেকটি আসনে যাচাই-বাছাইসাপেক্ষে প্রার্থী দেওয়া হবে বলে জানতে পেরেছি। যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনে আমি নিজে একবার প্রার্থী হয়েছি, এবারও প্রত্যাশা করছি। যদিও এইসব বিষয়, কেন্দ্র থেকেই ঘোষণা হবে। আট দল যাকে যোগ্য মনে করবে, তিনিই প্রার্থী হবেন, অন্যরা সর্বশক্তি নিয়ে তার পক্ষেই অবস্থান নেবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমিও ভাসা ভাসা শুনছি প্রার্থী পরিবর্তনের বিষয়টি। সেক্ষেত্রে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা শোয়াইবের নাম শোনা যাচ্ছে। কিন্তু মাঠ যেই গরম করুক না কেন, প্রার্থী ঘোষণা কেন্দ্র থেকেই হবে।’

কথা হয় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস যশোরের সভাপতি মাওলানা আব্দুল মান্নানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যশোরের ছয়টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছি। কিন্তু এই প্রার্থী আসলে শেষকথা নয়। যেহেতু আট দল রাজনৈতিক ইস্যুতে এক হয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি, সেক্ষেত্রে প্রার্থী পরিবর্তন হতেই পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেন্দ্র থেকে তেমন কোনো নির্দেশনা আসেনি। যশোর-৩ আসনে জামায়াতের প্রার্থী আব্দুল কাদের পরিবর্তন হতে পারে- এমন সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য আমার জানা নেই। হতে পারে আট দল তাকেই রাখছে, আবার বদলও করতে পারে। তবে, যশোরের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে গুঞ্জনের কথা বলছেন, তেমনটি আমিও শুনেছি।’

এই বিষয়ে খেলাফত মজলিসের যশোর জেলার সিনিয়র সহ-সভাপতি হাফেজ মীর মোহর আলী যশোর-৩ আসনে জামায়াতের প্রার্থী পরিবর্তনের বিষয়ে বলেন, ‘যতটুকু জানতে পেরেছি, জোটের অন্য শরিকদের জন্যে একশ আসন ছাড়বে জামায়াতে ইসলামী। সেইক্ষেত্রে যশোরের কোনো আসন ছাড়বে কি না- তেমন আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। বিগত সময়কালে বিভিন্ন আসনে সংশ্লিষ্ট দলগুলোর ভোটের হিসাব, গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে কেন্দ্র বিবেচনা করবে। আগামী ২ ডিসেম্বর খুলনায় আট দলের মহাসমাবেশ আছে। বিভাগীয় সমাবেশগুলো সম্পন্নের পর কিন্তু নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার আগেই সারাদেশে প্রার্থী চূড়ান্ত হবে। সেইক্ষেত্রে যশোর-৩ আসন যদি পীরসাহেবের দল (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ) চায়, সেটি বিবেচনা হতেও পারে।’

এসব বিষয়ে খোলাখুলি কথা হয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক ও যশোর-৩ আসনে দলীয় প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা শোয়াইব হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আট দল যদি সিদ্ধান্ত নেয় যশোরের এই আসন কিংবা সকল আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করবে, আমরা নির্দ্বিধায় সেটি মেনে নেবো। মনোনীত প্রার্থীর পক্ষেই সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবো।’

সদর আসনে জামায়াতের প্রার্থী পরিবর্তন করে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে তিনি জানান, মিডিয়াকে এই বিষয়ে তথ্য দেওয়ার মতো কোনো কিছুই তার কাছে নেই।

অবশ্য, তার দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত বেশ কয়েকজন নেতা এই প্রতিবেদককে বলেছেন, যশোর-৩ আসনে জামায়াতের প্রার্থী বদলে তাকে (শোয়াইব হোসেন) দেওয়ার কথা চলছে।
জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পরিচালক, দলের জেলা কমিটির সহ-সেক্রেটারি অধ্যাপক গোলাম রসুল বলেন, ‘আসন নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা এখনো হয়নি। দলের কেন্দ্রীয় কমিটি কাকে প্রার্থী করবে, কাকে সরাবে- সেটি তারাই নির্ধারণ করবে। আমরা যশোরের ছয়টি আসনের প্রার্থীর পক্ষে সব ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছি। ভিপি কাদেরকে সরিয়ে এই আসনে অন্য কাউকে দেওয়ার বিষয়টি আমি এখনো শুনিনি। তবে, জোটের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে যদি কোনো পরিবর্তন করতে হয়, আমরা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছাড়াই সেই নির্দেশনা মেনে চলতে প্রস্তুত রয়েছি।’

নির্বাচনে এই আসনে জামায়াতের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার অনেক আগে থেকেই প্রচার-প্রচারণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ভিন্নধর্মী আয়োজনে ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় উঠানবৈঠক, পথসভার পাশাপাশি ফুটবল টুর্নামেন্ট, হাডুডু প্রতিযোগিতা, ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ইত্যাদি গণমুখী কর্মকাণ্ড পরিচালনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার রবিউল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী পরিবর্তন হচ্ছে, কি হচ্ছে না- তা নিয়ে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। এমন খবর শুনিও। নির্বাচনে বিজয়ী হতে মানুষের দোরগোড়ায় যাচ্ছি। জনগণের ব্যাপক সাড়াও মিলছে। আশা করছি, জনগণ সর্বোচ্চ ভোট দিয়েই আমাদের বিজয়ী করবে।’

যশোরের রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র সদর আসনটি প্রত্যেক দলের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই জেলার রয়েছে ঐতিহাসিক মর্যাদা।

ব্রিটিশ-ভারতের প্রথম তিনটি জেলার মধ্যে যশোর অন্যতম। তেভাগা আন্দোলন, নীলকরদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম, মহান ভাষা আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন ‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এবং ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে যশোরের অবদান অনস্বীকার্য। এটি মুক্তিযুদ্ধে প্রথম শত্রুমুক্ত জেলাও।

যশোর সদর আসনের অন্তর্গত ঐতিহাসিক টাউন হল ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম জনসভা। স্বৈরাচার এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনেও যশোরের রয়েছে অসামান্য অবদান। দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের তীর্থভূমিও বলা হয় যশোরকে। কৃষি, শিল্প, সাহিত্য-প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য গৌরবের। জাতীয় রাজনীতিতেও যশোরের অবদান অসামান্য। আর এসবই আবির্ভূত হতো জেলা সদর থেকে। যা বর্তমানে যশোর-৩ আসনের অন্তর্গত। স্বাধীনতার পর এটি ছিল তৎকালীন বৃহত্তর যশোর জেলার যশোর-৯ আসনভুক্ত।

এই আসনে মোট ভোটার ছয় লাখ ৫২ হাজার ২৫৫ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার তিন লাখ ৩১ হাজার ১৬৫, নারী ভোটার তিন লাখ ২৯ হাজার ৮০ এবং হিজড়া জনগোষ্ঠীর ভোটার রয়েছে দশ জন।

ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

Ad for sale 270 x 200 Position (2)
Position (2)