জিয়াউল হক
, যশোর
আসছে নির্বাচনে বড় ভূমিকা রাখবে তরুণরা। কে নির্বাচিত হবেন তা অনেকটা নির্ভর করছে তরুণদের সিদ্ধান্তের ওপর।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যুগুলোর একটি তরুণ ভোটার। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বমহলে আলোচিত ইস্যুটি নিয়ে কাজ করছে রাজনৈতিক দল ছাড়াও প্রার্থীরা। তরুণদের কাছে টানতে নানা পদক্ষেপও নিয়েছেন তারা।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তিন ধাপে ভোটার তালিকা দেওয়া হয়েছে। সবশেষ তালিকায় মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার। এর মধ্যে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি। যাদের একটি বড় অংশই এবার প্রথম ভোট দেবেন।
যশোর শহরের বারান্দীপাড়া এলাকার ভোটার ইফতেখার হোসেন ইফতি জানান, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেই তিনি ভোটার হয়েছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় সেবার ভোট দিতে পারেননি। এবার পরিবেশ থাকলে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চান এ শিক্ষার্থী। বলেন, ‘জয়-পরাজয় থাকবেই, তবে ভোটের মাধ্যমে সেটা নির্ধারণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে এবার বন্ধুরা সবাই মিলে ভোট দিতে যাবেন, বলেও জানান তিনি।
বাঘারপাড়ার রায়পুরের ইমদাদ শাওন বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার রাতের আঁধারে ভোট কেটে নিয়েছে। বোমাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি পুলিশ দিয়ে হয়রানি করেছে। স্বাভাবিক কারণে বিরোধীদলীয় সাধারণ কর্মী-সমর্থকরাও তখন ভোট দিতে যেতে পারেননি। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমরাও ঝুঁকি নিইনি। এবার যদি পরিস্থিতি ভালো হয়, প্রথমবারের মতো ভোট দিতে যাব।’
‘বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তরুণরা ভালো-মন্দ বুঝতে শিখেছে। এখন তালগাছ দেখিয়ে কলাগাছ বোঝানোর শিশুসুলভ মানসিকতারও পরিবর্তন হয়েছে,’ অভিমত এই তরুণের।
শহরের ঘোপ এলাকার শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার বলেন, ‘‘আগে শুনতাম, ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো’। বোঝার পর দু’বার ভোট হতে দেখেছি। কিন্তু পরিবেশ না থাকায় ভোটকেন্দ্রে যেতে পারিনি। দীর্ঘসময় পর আবার হয়তো ভোট দেওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে।’
এদিকে তরুণ ভোটারদের সমর্থন পেতে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী রীতিমতো ঘাম ঝরাচ্ছে। সভা-সমাবেশে তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে তারা। স্ব-স্ব ছাত্র সংগঠনকে সক্রিয় করে তুলতে দলের অন্যান্য উইংগুলোকেও নির্দেশনা দিচ্ছে। মূলত তরুণদের নিয়ে গড়ে ওঠা নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি-কে পেছনে ফেলতে তাদের আয়োজন এবার চোখে পড়ার মতো, বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সনাক যশোরের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক শাহীন ইকবাল বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোটাধিকার প্রয়োগের বিকল্প নেই। ফ্যাসিস্ট সরকার সে ধারা বন্ধ করে দিয়েছিল। যে কারণে সাধারণ ভোটারদের পাশাপাশি নতুন কিম্বা তরুণ ভোটাররাও ভোটের মাঠে যেতে পারেনি। যা তরুণদের ভেতর ক্ষোভ, আক্ষেপ তৈরি করেছিল। যার চূড়ান্ত রূপ ছিল জুলাই বিপ্লব।
অধ্যাপক শাহীন ইকবাল আরো বলেন, ক্ষমতাসীন কিম্বা বড় দলগুলো সবসময়ই তরুণদের হাতে রাখতে চায়। আর সেটি করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই তাদের ভবিষ্যতকে নষ্ট করে দেয়। অতীতে এমন অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু জুলাই বিপ্লব তরুণদেরকে সে ধারা থেকে অনেকটাই বের করে এনেছে। তারা এখন অন্ধ বিশ্বাসে নয় বরং দেশ, জাতির স্বার্থকে বিবেচনায় রেখে ভোট দেওয়ার অবস্থানে পৌঁছেছে। সেটা যদি বাস্তবে রূপ নেয়, তাহলে ভোটের মাঠে ‘তুরুপের তাস’ হয়ে উঠতে পারেন তরুণ ভোটাররা। কারণ, তাদের একটি বড় অংশই শিক্ষিত এবং তারা দেশ সম্পর্কে ভাবেন। তাছাড়া নানা কারণে এবার তরুণ ভোটারদের উপস্থিতিও বেশি হবে। যা ভোটের ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
যশোর জেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘তরুণদের ঘিরেই আমাদের নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা চলছে। কেননা, তারা জাতির ভবিষ্যত কর্ণধার।’
‘আসন্ন নির্বাচনে তরুণরা ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র কাঠামো বিনির্মাণে নিজেদেরকে সংযুক্ত করবে। আর যারা ন্যায়, ইনসাফের সাথে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, তাদেরকেই তরুণরা ভোট দেবে। ডাকসুসহ সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলো তারই ইঙ্গিত দেয়,’ বলছিলেন অধ্যাপক কুদ্দুস।
যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, ‘নির্বাচনি ইশতেহারে তরুণদের নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা থাকবে বিএনপির। অতীতের মতো তাদেরকে আমরা রাজনীতির বলির পাঁঠা বানাবো না। বরং কর্মমুখী শিক্ষা, কর্মসংস্থান নিশ্চিতকল্পে আমরা কাজ করবো। যাতে তরুণরা দেশ গড়ার কারিগর হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারে।’
বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদ জানান, আসছে নির্বাচনে প্রবীণ ও তরুণদের সমন্বয়ে দেশ গড়ার লক্ষ্যে এগোচ্ছে বিএনপি। সে লক্ষ্যে ইতিমধ্যে অনেকটাই এগিয়ে গেছে তাদের দল।