ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
ঝিনাইদহের পবাহাটিতে প্রতিবেশির খাটের নিচ থেকে সাইমা আক্তার সাবার (৪) মৃতদেহ উদ্ধারের প্রতিবাদে এবং হত্যাকারীর ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী।
বৃহস্পতিবার (০৪ ডিসেম্বর) বেলা ১২টার দিকে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কে গাছের গুড়ি ফেলে রাস্তার ওপরে বসে অবরোধ করেন তারা। সে সময় রাস্তার দুই পাশে প্রায় দেড় কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়।
পরে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন ঘটনাস্থলে যেয়ে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
নিহত শিশুর মা ফাতেমা বলেন, ‘আমার মেয়েকে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলেছে। আমার বুক খালি করে দিয়েছে। আমার মেয়ের গালের মধ্যে গামছা ভরে পা দিয়ে চেপে ধরে মেরে ফেলেছে। আমি হত্যাকারীর ফাঁসি চাই।’
এলাকাবাসী বলেন, ‘ওই মহিলা (সাবার হত্যাকারী হিসেবে গ্রেপ্তার) নিরপরাধ শিশুকে হত্যা করেছে। মা-বাবা ভাই কোনো অপরাধ করতে পারে, কিন্তু ছোট এই শিশুটি কি অপরাধ করতে পারে! তাকে এভাবে নির্মমভাবে হত্যা করতে হবে? আমরা এই হত্যাকারীর ফাঁসি চাই।’
এদিকে, অবরোধের কারণে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। ট্রাক চালক ফারুক হোসেন বলেন, ‘গাড়িতে সার রয়েছে। সার নিয়ে ভবানীপুর যাবো। সড়ক অবরোধের কারণে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি। কখন শেষ হবে বলতে পারছি না। খুবই ভোগান্তিতে পড়েছি।’
ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘একটা শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেছে। তার লাশ যে ঘরে পাওয়া গিয়েছিল তাকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। হত্যাকারীর বিচার চেয়ে স্থানীয়রা সড়ক অবরোধ করেছে। আমি এসে তাদের সাথে কথা বলেছি। এখন পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।’
বুধবার (০৩ ডিসেম্বর) রাতে নিহত শিশুর বাবা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে মেয়ে আমাকে ঘুম থেকে তুলে আমার মুখে চুমু দেয়। আর বলে আব্বু কাজে যাবানা, আমার জন্য মিষ্টি কিনে আনতে হবে না। তার কথা শুনে আমি দ্রুত উঠে পড়েছি। পরে ভ্যান নিয়ে কাজে বের হবার সময় মেয়েকে ভ্যানে চড়িয়ে একটু ঘুরিয়ে নামিয়ে দিই। পরে আমার স্ত্রী ফাতেমাকে বলেছে আম্মু তুমি ভাত রান্না করো। রান্না শেষে আমাকে ডাক দিও আমি বাইরে খেলছি।’
তিনি বলেন, ‘পরে আমার স্ত্রী মেয়েকে ডাক দিয়ে আর পায়না। তখন আমার ছেলে আমাকে জানায় সাবাকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি বাড়িতে এসে স্থানীয়দের সাথে বাড়ির পাশের বিভিন্ন পুকুরসহ আশপাশের সব জায়গায় খুঁজে কোথাও পাইনি। পরে থানায় জিডি করি আর মাইকিং করি। তবুও মেয়েকে পাই না। পরে আমি প্রতিবেশি আখতারুজ্জামান মাসুদের বাড়ির ওপরে মেয়েকে খুঁজতে গিয়েছিলাম। তখন মাসুদের স্ত্রী আমাকে জানায় তার মেয়ে তাদের বাড়িতে আসেনি।’
পিতা আরও বলেন, ‘পরে আমার সন্দেহ হলো-পাড়ার সবাই আমার মেয়েকে খোঁজ করছে, কিন্তু মাসুদের স্ত্রী আসছে না, কোনো খোঁজও করছে না। রাতে পুকুর পাড়ে আবারও যাই। সে সময় দেখি মাসুদের স্ত্রী একটি বস্তা নিয়ে কোথায় যাচ্ছে। তখন আমি চিৎকার দিলে সে আবার ঘরে দৌড়ে চলে যায়। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে আমার মেয়ের লাশ উদ্ধার করে।’