লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় নিয়োগবিধির দাবিতে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন উপজেলা পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি), পরিবার কল্যাণ সহকারী (এফডব্লিউএ) এবং পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক (এফপিআই) সদস্যরা।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকাল থেকে লোহাগড়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের সামনে এই কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
লোহাগড়া উপজেলার পরিবার কল্যাণ সহকারী শাহানা আফরোজ বলেন, ‘আমরা তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হয়েও বেতন পাই চতুর্থ শ্রেণির। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মূলচালিকা শক্তিই আমরা। ২৩ হাজার ৫০০ পরিবার কল্যাণ সহকারী, ৪ হাজার ৫০০ পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক, ৫ হাজার পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা-সবাই একসাথে কাজ করি। জন্মনিয়ন্ত্রণ, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, শিশুমৃত্যুরোধ নিয়ে প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা দিই। পরিবারকে সুন্দর রাখতে একটি বাচ্চা জন্মের পর তার নিবন্ধন, গর্ভবতীসেবা নিশ্চিত, হাসপাতালে পাঠানোর জন্য উৎসাহিত করা, বাড়িতে ডেলিভারিসহ ইপিআই-এ সহযোগিতা করি।'
তিনি আরও বলেন, ‘করোনার ভ্যাকসিন, জরায়ুমুখ ক্যান্সারের ভ্যাকসিন দিয়েছি, এর আগে পোলিও মুক্ত করেছি, কমিউনিটি ক্লিনিকে বসি, ইপিআই-তে বসি- এক কথায় আমরা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সমস্ত সেবা দিই। ট্যাবে কাজ করি, আমাদের সমস্ত রিপোর্ট অনলাইনে যায়। কিন্তু আমরা তৃতীয় শ্রেণিতে যোগদান করেও ২০১৫ সালের পরে চতুর্থ শ্রেণিতে ১৭তম গ্রেডে বেতন পাই। মূল কথা হচ্ছে, আমাদের কোনো নিয়োগবিধি নেই, কোনো পদোন্নতি নেই। বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেও ২৬ বছরে কোনো নিয়োগবিধি হয়নি। যতোদিন নিয়োগবিধি না হবে, ততোদিন কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে যাবো।’
নলদী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা ইতি নাগ বলেন, ‘আজ এখানে দাঁড়িয়েছি একটাই দাবি- নিয়োগবিধি। সবাই কাজ করি, কিন্তু কোনো মূল্যায়ন নেই। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের যারা আছি, সারাদেশে আমরাই একমাত্র যারা ২৪ ঘণ্টা সেবা দিই। অন্যান্য সব জায়গায় সবাই ডিউটি করে, তাদের শিফটিং ডিউটি থাকে, লোকজন থাকে। কিন্তু আমরা একজনই এএনসি, পিএনসি, নরমাল ডেলিভারি, সাধারণ রোগী দেখা, শিশু স্বাস্থ্যসেবা, কিশোর-কিশোরীর সেবা দেওয়া, পরিবার পরিকল্পনা সেবা দেওয়া, এমনকী স্কুলে গিয়েও স্বাস্থ্যসেবা এবং সর্বোপরি গ্রামে গ্রামে গিয়ে স্যাটেলাইট ক্লিনিকও পরিচালনা করি। অথচ, আমাদের জন্ম যেখানে মৃত্যু সেখানে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কোয়ার্টারে থাকি বাধ্যতামূলক। আগে যে বাসাভাড়া ছিলো, এখন তা বেড়ে কয়েকগুণ হয়েছে। কোয়ার্টারের ওয়াশরুম ভাঙা, বর্ষা হলে পানি পড়ে, রাস্তায় বেরোতে গেলে কাদা-পানি। আমাদের সিলেকশন গ্রেড নেই, নিয়োগবিধির কোনো পরিবর্তন নেই। এখন মাঠে নেমেছি, দাবি না মানা পর্যন্ত ঘরে ফিরবো না।'
কাশিপুর ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক মশিউর রহমান বলেন, ‘আমরা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের জন্মলগ্ন থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে সেবা দিয়ে আসছি। নতুন দম্পতি শুরু থেকে কীভাবে পরিবার পরিকল্পনা করবে, বাল্যবিবাহ, যৌতুক এগুলো নিয়েই আমাদের কাজ। সমাজের যে অন্যায়-অত্যাচার, এগুলো নিয়েও কাজ করি। এখন স্কুলে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, আজও নিয়োগবিধি আমরা পাইনি।’
সকল যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি নেই। যার ফলে সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে, আর্থিকভাবেও হতে হয় ক্ষতির শিকার। সেজন্য কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি, যা পালন করা হচ্ছে। সরকারের কাছে আহ্বান, অনতিবিলম্বে নিয়োগবিধি দিন- নেতৃবৃন্দ বলেছেন।