যশোর, বাংলাদেশ || বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫
Subornovumi Subornovumi Subornovumi Subornovumi Subornovumi Subornovumi
Ad for sale 870 x 80 Position (1)
Position (1)
Ad for sale 870 x 100 Position (1)
Position (1)

চার স্কুলে পরীক্ষা স্থগিত করায় সাতক্ষীরায় উত্তেজনা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশ : মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর,২০২৫, ০৮:২১ পিএম
চার স্কুলে পরীক্ষা স্থগিত করায় সাতক্ষীরায় উত্তেজনা

সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের চার দফা দাবির কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাতক্ষীরার চারটি সরকারি বিদ্যালয়ে দ্বিতীয়দিনেও বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে, সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার সকালে পরীক্ষা বিষয়ে পক্ষে–বিপক্ষে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরীক্ষা বন্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেলেও আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বলছেন, বহুদিনের বঞ্চনার বিরুদ্ধে কেন্দ্রের নির্দেশ অনুযায়ী তারা কর্মসূচি পালন করছেন। এসময় জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহে গেলে তারা ছাত্রদের দ্বারা হেনস্থার শিকার হন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষার্থী বলেছে, সারাবছর নিয়মিত পড়াশোনা করেও ফাইনাল পরীক্ষার জন্য পরপর দুই দিন পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। কিছু সহপাঠী, যারা সারাবছর পড়াশোনা করেনি, তারা পরীক্ষা না দিয়ে অটোপাস পেতে চাইছে। তারা যেসব স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়েছে, সেই স্যারের পক্ষ নিয়েছে। যখন এর বিরোধিতা করা হয়, তখন তারা মারধরের হুমকি দিচ্ছে। এসময় পুরো ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে উঠে।

হাবিবুর রহমান নামে একজন অভিভাবক বলেন, ‘সরকারি বালক ও বালিকা বিদ্যালয়ে পড়াশোনার খুব খারাপ অবস্থা। এখানকার শিক্ষকরা ক্লাসে লেখাপড়া করান না, তারা কোচিংয়ে ব্যস্ত থাকেন। বছরের শেষে পরীক্ষা বন্ধ রেখে যারা দাবি আদায়ের আন্দোলন করছেন, তাদের উচিত শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ বিবেচনা করা। প্রথমে একটি নির্বাচিত সরকার আসুক, তারপর আন্দোলন করুন। বর্তমান পরিস্থিতিতে যারা শিক্ষকদের রাস্তায় নামাচ্ছে, তারা প্রকৃত শিক্ষাদস্যু।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিছু শিক্ষক নাকি ছাত্রদের বলছে আন্দোলনের পাশে দাঁড়ালে পরীক্ষা দিতে হবে না। এতে ছাত্ররা দুই দলে ভাগ হয়ে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। ছাত্রদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা গ্রহণযোগ্য নয়।’

নাদিরা সুলতানা নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘এবার যারা এসএসসি দেবে তারা করোনার সময় পিএসসি-জেএসসি দিতে পারেনি। এখন তাদের টেস্ট পরীক্ষা খুব গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষা বন্ধ থাকলে বড় ক্ষতি হবে। পরীক্ষার দিন সকালে এসে জানতে পারছি পরীক্ষা নেই—এটা অভিভাবকদের সঙ্গে তামাশার মতো। প্রয়োজনে আমরা অভিভাবকেরাই পরীক্ষা নেবো।’

এদিকে, মঙ্গলবার বেলা এগারটার দিকে সাতক্ষীরা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষার পক্ষে-বিপক্ষে শিক্ষার্থীদের দুইটি দল তৈরি হয়েছে। বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে তারা হাতাহাতি ও মারামারিতে লিপ্ত হয়। এতে কয়েকজন আহতও হয়। মারামারির ছবি ধারণ করতে গেলে শিক্ষার্থীদের কয়েকজন সাংবাদিকদের দিকে তেড়ে যায়। এমনকী তারা ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজ সাংবাদিকদের মুছে দিতে বাধ্য করে। এতেই তারা ক্ষ্যান্ত হয়নি। পরবর্তীতে শহরের মিনি মার্কেটে অবস্থিত সাংবাদিকদের অফিসেও তারা চড়াও হয় ও আস্ফালন করতে থাকে। সাংবাদিকদের নিয়ে অশালীন মন্তব্যও করতে দেখা যায় তাদের।

যমুনা টিভির জেলা প্রতিনিধি আকরামুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষকদের কর্মবিরতির খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী আমাদের ঘিরে ধরে মোবাইল ও ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে সব ভিডিও ডিলিট করে দেন। তারা আমাদের কাছে জানতে চায়, কে আমাদের ডেকেছে। শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন—তবে ছাত্রদের এমন আচরণ সাংবাদিকদের ওপর কেন হলো, তা আমরা বুঝতে পারছি না। এসময় ছাত্ররাও বারবার বলতে থাকে- আমাদের এই ভিডিও প্রকাশ হলে স্কুলের মান-সম্মান নষ্ট হবে।’

ডিবিসি নিউজের জেলা প্রতিনিধি এম বেলাল হুসাইন বলেন, ‘সংবাদ কাভার করে অফিসে ফেরার পর সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী এসে ভিডিও ডিলিট করতে বলে এবং ফোন চেক করতে চায়। আমি স্পষ্টভাবে বলি, আমি তোমাদের কোনো বিশৃঙ্খলার ফুটেজ ধারণ করিনি। পরে তারা এক টিভি চ্যানেলের সাংবাদিককে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। শিক্ষার্থীদের এই ধরনের আচরণে হতবাক হয়েছি।’

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, ‘মাধ্যমিক পর্যায়ের কোমলমতি কিশোর শিক্ষার্থীরা তুচ্ছ বিষয়ে এমন ভয়ানক আচরণ করতে পারে, সেটা ভাবতেও লজ্জা লাগে।’

শিক্ষার্থীদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করতে জাতি গড়ার কারিগর শিক্ষকদের কাছে অনুরোধ করেন তিনি।

সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আন্দোলনকারী শিক্ষক বলেন, ‘সহকারী শিক্ষকরা বছরের পর বছর বঞ্চনার শিকার। সুপ্রিম কোর্ট রায় দিলেও টাইমস্কেল–সিলেকশন গ্রেড ঝুলে আছে। দাবি পূরণের নিশ্চয়তা ছাড়া পরীক্ষা নিলে সব থেমে যাবে। তাই কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবেই পরীক্ষা বর্জন করা হয়েছে। চার দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম টুকু বলেন, ‘২০ তারিখ থেকে বিভিন্ন পরীক্ষা চলছিলো। প্রস্তুতি থাকলেও আজ শিক্ষকরা পরীক্ষা নিতে রাজি হননি। পরীক্ষার পক্ষে-বিপক্ষে দুই গ্রুপ হওয়ায় উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। সবাই শিক্ষকদের দাবির পক্ষে, কিন্তু পরীক্ষা বন্ধ করে আন্দোলন হওয়া ঠিক নয়।’

সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসার আবুল খায়ের বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সব স্কুলে আমরা তা পাঠিয়েছি। কিন্তু কিছু শিক্ষক বলছেন- কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমতি ছাড়া আন্দোলন স্থগিত করতে পারবেন না। যারা পরীক্ষা বন্ধ করেছে, তাদের নাম মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়ার ঘটনাও দুঃখজনক।’

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আফরোজা আখতার বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলেছি-পরীক্ষা অবশ্যই চালিয়ে নিতে হবে। কিন্তু শিক্ষকরা পরীক্ষা বর্জন করে পরীক্ষা নেননি। সাংবাদিকদের হেনস্তার ঘটনাও দুঃখজনক। যারা এতে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

Ad for sale 270 x 200 Position (2)
Position (2)