নড়াইল প্রতিনিধি
দীর্ঘ আট বছরেও চালু হয়নি নড়াইলের ২৫০ শয্যা হাসপাতাল। ১০০ শয্যার হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন প্রায় চারগুণ রোগী সেবা নিচ্ছে। অথচ, পাশেই রয়েছে ঝাঁ চকচকে সুউচ্চ ৯ তলা ভবন।
লিফটের কাজ শেষ না হওয়াতে ২৫০ শয্যা হাসপাতাল থেকে সেবার পাওয়ার আশা দিন দিন নিরাশায় পরিণত হচ্ছে।
কাজের মেয়াদ শেষ হলেও ভবন হস্তান্তর আর হাসপাতাল চালুর ব্যাপারে কিছুই জানা নেই স্বাস্থ্যবিভাগের।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের সিঁড়ির নিচ থেকে বারান্দা (করিডোর) কোথাও পা ফেলার জায়গা নেই। রোগী আর স্বজনদের এমন ভিড় নিত্যদিন চোখে পড়ে নড়াইল জেলা শহরের ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটির। প্রতিদিন তিন থেকে চারগুণ রোগীর চাপ সামলাতে নাজেহাল অবস্থা সংশ্লিষ্টদের।
হাসপাতালটিতে সেবা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা জানান, ফ্লোর, করিডোর, সিঁড়ির নিচে মাদুর আর চাদর মেলে রোগী নিয়ে অবস্থান করছে অন্তত ২৫০ জন স্বজন। একদিকে শীতের প্রকোপ, অন্যদিকে রোগীদের সংক্রমণের শঙ্কা-নিরুপায় হয়েই উন্নত চিকিৎসার আশায় হাসপাতালে অবস্থান করছেন তারা।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, অস্ত্রোপচারের সুবিধা না থাকাসহ হাসপাতালটির বেহাল অবস্থার কারণে এক থেকে দুই দিনের মধ্যে এখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেলসহ ঢাকায় রোগী স্থানান্তর করতে বাধ্য হচ্ছে রোগীরা।
জেলা গণপূর্ত বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে নড়াইলে ২৫০ শয্যার হাসপাতালের মূল ভবন, সার্ভিস ভবন ও চিকিৎসকদের জন্য ডরমেটরি ভবন নির্মাণে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুমোদন পায়। ২০১৮ সালের জুন মাসে ৮টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসপাতালের ৮ তলা ভবনসহ প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু করে। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৬১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আর বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৯ম তলায় ১০ শয্যাবিশিষ্ট আইসিইউ নির্মাণের কাজের ব্যয় ধরা হয় ৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। তিন দফা বাড়িয়ে গত বছরের জুনে কাজের মেয়াদ শেষে হস্তান্তরের কথা থাকলেও নকশা জটিলতায় লিফটের বাটনে ঝুলে আছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া।
নড়াইল সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক মো. আব্দুল গফ্ফার বলেন, ‘সীমিত জনবলসহ নানা সংকটের মাঝে এখন প্রায় চারগুণ রোগীর সেবা দিতে হচ্ছে আমাদের। ২৫০ শয্যা হাসপাতাল ভবনের কাজ শেষ হয়েছে। এটি একটি বহুমুখি হাসপাতাল। রোগী থাকার জায়গা চতুর্থতলার উপরে। যে কারণে লিফটের কাজ সম্পন্ন না করে কোনোভাবে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম চালু করা সম্ভব নয়। লিফট সমস্যা সমাধান করে কবে নাগাদ হস্তান্তর করবে, সেটা গণপূর্তই ভালো বলতে পারবে।’
হস্তান্তরের পর কতদিন নাগাদ সেবা কার্যক্রম চালু করা সম্ভব এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য বিভাগের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ভবন প্রস্তুত হলেও লোকবল নিয়োগসহ আনুষাঙ্গিক অনেক বিষয় বাকি থেকে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের সদিচ্ছায় সেটা হস্তান্তর পরবর্তী আরো এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে চালু হতে পারে।’
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মু. সারোয়ার হোসেইন বলেন, ‘লিফটের কাজ শেষ না হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে স্বাস্থ্যবিভাগের কাছে ২৫০ শয্যা হাসপাতালটি হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি। এক হাজার ২৫০ কেজির চারটি লিফট (প্যাসেঞ্জার কাম বেড লিফট) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিকল্পনা কমিশনে ডিপিপি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। আশা করা যায়, আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যে অনুমোদনসাপেক্ষে লিফটের কাজ শেষ করে আমরা হস্তান্তর করতে পারবো।’
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে জেলা শহরের ৫০ শয্যার হাসপাতালটিকে ১০০ শয্যায় রূপান্তরিত করা হয়।